আজ- রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Shotto Barta Logo

শিরোনাম

কিয়েভ দখলে মরিয়া পুতিন :

সত্য বার্তা ডেস্ক : ইউক্রেনের বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধের মুখে রুশ অভিযানের অগ্রাভিযানে আপাতত কিছুটা শ্লথগতি। প্রতিরোধ মোকাবিলার পাশাপাশি নিজেদের রসদ সমস্যারও মোকাবিলা করতে হচ্ছে তাদের। অগ্রবর্তী সেনাদের তেল, গুলি ও খাদ্য ফুরিয়ে যাচ্ছে। তাদের ডিজেলের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে, রাশিয়া অভিযানের জন্য বরাদ্দ তার মোট যুদ্ধশক্তির মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ ব্যবহার করেছে এখন পর্যন্ত। ইউক্রেনের সামরিক বেসামরিক প্রতিরোধের তীব্রতার মুখে পুতিনের জেনারেলরা এখন পুরো অভিযান পরিকল্পনাটিই ফের ঢেলে সাজাতে বাধ্য হচ্ছেন। সর্বশেষ খবর, রুশ বাহিনীর ৪০ মাইল দীর্ঘ একটি সামরিক বহর ট্যাঙ্কসহ রওনা দিয়েছে রাজধানী কিয়েভের উদ্দেশ্যে। স্যাটেলাইট ফুটেজ ও ইমেজের বরাতে মার্কিন মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সার টেকনোলজিস জানায়, বহরটিতে কয়েক শ সাঁজোয়া যান রয়েছে। সর্বশেষ, বহরটি রাজধানীর উত্তরে ইভানকিভ শহরের কাছাকাছি অবস্থান করছিল। হোয়াইট হাউস এই সামরিক বহরটিকে নিবিড় নজরদারিতে রেখেছে বলে জানায় সিএনএন।
রুশ বহরটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনের জন্য পরিস্থিতি এখন ‘আরো চ্যালেঞ্জিং হবে’ বলে আশঙ্কা তাদের। রাশিয়ার সেনাদের অপ্রতিরোধ্য ঢেউ এগিয়ে আসছে বলে সতর্ক করেন তারা। এদিকে আক্রান্ত ইউক্রেনকে অবিলম্বে ৩৫ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা সহায়তা দেয়ার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু মার্কিন কর্মকর্তারা এ কথাও না বলে পারছেন না যে, যখন কিয়েভে সরাসরি উড়ে যাওয়া যেত তখন এই সহায়তা দেয়া যতটা সহজ ছিল, এখন আর তেমনটি নেই। এর আগে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, ওরা বিশেষ বাহিনী পাঠিয়েছিল নাশকতার জন্য, আমরা সব নস্যাৎ করে দিয়েছি। একটি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র দখলের চেষ্টায় ছিল রুশ চররা, যেখান থেকে ৩০ লাখ বাসিন্দার কিয়েভে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

৭০ ইউক্রেন সেনার প্রাণহানি : রুশ কামানোর গোলাবর্ষণে গতকাল দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় শহর অকথারকায় ৭০ জনেরও বেশি সেনা নিহত হওয়ার খবর মিলেছে। হামলায় ইউক্রেন সামরিক বাহিনীর একটি ইউনিট পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। উদ্ধারকারী ও স্বেচ্ছাসেবীরা ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে মরদেহ বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এখানকার লড়াইয়ে রাশিয়ার পক্ষেও অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং ‘অনেক রুশ মরদেহ’ পড়ে থাকার কথা জানা গেছে।
কিয়েভ এখনো অটল দুর্গ : ইউক্রেন সেনা এবং স্বেচ্ছাসেবীদের প্রবল প্রতিরোধ এখনো ঠেকিয়ে রেখেছে কিয়েভের পতন। নতুন শক্তিতে হামলার পরিকল্পনায় অপেক্ষা করছে রুশ বাহিনী। রুশ আক্রমণ তীব্র হয়েছে উত্তরপশ্চিমে ১৬ লাখ মানুষের শহর খারকিভে। সেখানে থার্মোব্যারিক বা ভ্যাকুয়াম বোমার মতো নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে। সেনারা সেখানে টিউব ও রকেট গোলা নিয়ে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। রুশ আগ্রাসনের ষষ্ঠ দিনে গতকাল মঙ্গলবার সকালে রুশ বাহিনীর একটি ক্ষেপণাস্ত্র খারকিভ শহরের কেন্দ্রস্থলে ফ্রিডম স্কয়ারের সরকারি ভবনগুলোতে আঘাত হানে। এর ফলে বিশাল বিস্ফোরণ ঘটে সেখানে, যা বাসাবাড়ির জানালা বিচূর্ণ করে দেয় এবং কাছাকাছি সব গাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যায়। খারকিভে বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন ইউক্রেন কর্মকর্তারা। তবে শহরটির দক্ষিণে হামলার তীব্রতা সামান্য কমেছে। বিশ্লেষকদের মতে এর মূল কারণ, পূর্বাঞ্চলীয় মারিপোল এবং জাপোরিজিয়া শহর দখলে চূড়ান্ত হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে রুশ বাহিনী।
শিগগিরই দ্বিতীয় বৈঠক বেলারুশ-পোল সীমান্তে : গত সোমবার দুপুরে বেলারুশে দুই পক্ষের পাঁচ ঘণ্টার আলোচনার প্রাপ্তি বিষয়ে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইল পোডোলিয়াক বলেন, প্রতিনিধিরা প্রথম দফা আলোচনা করেছেন। সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় নিয়ে ভবিষ্যতে আলোচনার বিষয়েও তারা একমত হয়েছেন। কয়েকদিনের মধ্যেই বেলারুশ-পোল্যান্ড সীমান্তে দ্বিতীয়দফা বৈঠক হবে। এদিকে, ওই আলোচনা চলাকালেই ইউক্রেনের দুটি বড় শহর দখল করে নেয় রুশ বাহিনী। কিয়েভেও তিনটি ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে জেলেনস্কি এদিন ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইউক্রেনের সদস্যপদ চেয়ে ব্রাসেলসে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠান।
পুতিনকে ফোনালাপে ম্যাক্রোঁর অনুরোধ : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে ফোন করে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন বন্ধের অনুরোধ করেছেন। পুতিনকে তিনি বলেন, বেসামরিক নাগরিক বসতিতে হামলা বন্ধ করুন। বেসামরিক অবকাঠামো রক্ষা করুন। প্রধান সড়কগুলো নিরাপদ রাখুন। জবাবে পুতিন জানান, তার এসব অনুরোধ রক্ষা করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন তিনিও। এ বিষয়ে ক্রেমলিনের বিবৃতি জানায়, পুতিন ফরাসি প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, যদি রাশিয়ার নিরাপত্তা-স্বার্থ বিবেচনায় নেয়া হয় তবেই কেবলমাত্র সমঝোতা হওয়া সম্ভব। এসব স্বার্থের মধ্যে রয়েছে, ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি, ইউক্রেনের নিরস্ত্রীকরণ এবং সেখানে নাৎসিবাদের উচ্ছেদ এবং ইউক্রেনের নিরপেক্ষ রাষ্ট্র থাকার নিশ্চয়তা। পশ্চিমাদের নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞায় তিনি যে কোনো চাপ বোধ করছেন, তার কোনো লক্ষণ মেলেনি ওই বিবৃতিতে।
ক্রমশ একা হয়ে পড়ছে রাশিয়া : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের বুকে সবচেয়ে বড় সেনা অভিযান শুরু করার সাজা হিসেবে রাশিয়ার কর্মকর্তা, শীর্ষ ব্যবসায়ী, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী, এমনকি প্রেসিডেন্ট পুতিনের ওপরও তারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শক্তি। তবে রণাঙ্গনে সেনা পাঠানো কিংবা নো-ফ্লাই জোন ঘোষণার ঘোষণার সম্ভাবনা নাকচ করে দেয় ওয়াশিংটন। তেমন কিছু করতে গেলে দুই পরাশক্তির মধ্যে পারমাণবিক লড়াই বেঁধে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে কিয়েভে পশ্চিমা সামরিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে। এর আগে গত সোমবার রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্যান্য সম্পদের ওপর নতুন অবরোধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এসব অবরোধের ধাক্কায় মুদ্রাবাজারে হু হু করে নেমে যাচ্ছে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের বিনিময় হার। গত সোমবার ডলারের বিপরীতে ২০ শতাংশ মূল্য হারায় রুবল। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের সুদের হার সাড়ে ৯ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত করে। এসব পদক্ষেপ শিগগিরই রুশ নাগরিকদের পকেটে আঘাত হানবে। দেশটিকে আরো একঘরে করতে একই দিনে দেশটির সদস্যপদ বাতিল করে উয়েফা ও ফিফা। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় রুশ খেলোয়াড়দের নিষিদ্ধ করারও উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।
বিক্ষোভ ভেতরে-বাইরে : রাশিয়াজুড়ে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভে গতকাল মঙ্গলবার অন্তত ৪১১ জনকে আটক করে সেদেশের পুলিশ। দেশটির ১৩টি শহরে এ ধরনের বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৪৩৫ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানায় ওভিডি-ইনফো নামে একটি আন্দোলনকারী গোষ্ঠী।
রাশিয়া ছাড়ছে বেসরকারি খাত : ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের জেরে রাশিয়া থেকে বিনিয়োগ তুলে নিতে শুরু করেছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। তেল-গ্যাস কোম্পানি শেল, বিপি এবং নরওয়ের ইকুইনর জানায়, তারা নিজেরা রাশিয়া থেকে ব্যবসা সরিয়ে নেবে। সেদেশে থাকা অন্য পশ্চিমা কোম্পানি, যেমন, এক্সনমোবিল ও টোটালএনার্জিকেও তাদের পথ অনুসরণে চাপ দেবে।

শেয়ার করুন :

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

এই রকম আরোও খবর

সাক্ষাৎকার