সত্যবার্তা ডেস্ক :
কক্সবাজার টেকনাফ সদরের পল্লানপাড়ার বাসিন্দা রমজান আলী। তিনি পেশায় দিনমজুর। পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে সকালে ঘুম থেকে উঠে বাজারে মাংস কিনতে যান। অন্যান্য দিন গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও আজ তা ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
মাংসের দাম শুনে বাসায় ফিরে আসেন এই দিনমজুর। ছেলে-মেয়েরা গরুর মাংস খাওয়ার আবদার করলে স্ত্রী সাবিনার কাছ থেকে আরও কিছু টাকা নিয়ে বাজারে যান রমজান আলী। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাও বেড়ে যায়। দাঁড়াতে হয় লাইনে। মাংস কিনতে গেলে কসাই বলেন একদাম এক হাজার টাকা।
ইয়াবা কারবারিদের কারণে মাংস কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেন রমজান আলী। তিনি জানান, একজন ১০ কেজি করে মাংস নিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে মাংসের সংকট হচ্ছে। এই সুযোগে মাংস ব্যবসায়ীরা মাংসের কেজি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি করছে। এতে আমাদের মতো দিনমজুররা মাংস কেনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে টেকনাফের বাজারে গরুর মাংসের দাম কেজিতে ৩০০ টাকা বেড়েছে । শুক্রবার ৯০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে গরুর মাংস।
ব্যবসায়ীরা জানান, মিয়ানমার থেকে গরু আমদানি বন্ধ থাকায় ও মাংসের চাহিদা বেশি হাওয়ায় দাম বেড়েছে।
টেকনাফের হ্নীলার মাংস ব্যবসায়ী কুরবান আলী বলেন, দুই দিন আগে গরুর মাংসের কেজি ছিল ৬০০ টাকা। চাহিদা বাড়লে এখানে দাম কিছুটা বাড়ে। প্রথমে ২০০ টাকা, পরে ৩০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস।
মাংস কিনতে এসেছেন স্কুলশিক্ষক শহিদুল ইসলাম। শবে বরাত উপলক্ষে আত্মীয়দের দাওয়াত দেওয়ায় বেশি মাংস কিনতে হচ্ছে তাকে। পাঁচ কেজি মাংস কিনতে তার প্রতি কেজিতে ২৫০ টাকা বেশি খরচ হওয়ায় চটেছেন দোকানদারের ওপর।
আরেক মাংস ব্যবসায়ী মো. মুরাদ বলেন, আগে এক কেজির কম মাংস কিনতে আসা ক্রেতা ছিল না। এখন এ সংখ্যা বেড়েছে। অনেকে লজ্জায় আসেন না।
টেকনাফের হোয়াইক্যং বাজারে আধা কেজি মাংস কিনতে এসেছেন বাজারের পাহারাদার নাগু মিয়া। তিনি বলেন, গত কোরবানির ঈদে (ঈদুল আজহা) মাংস উপহার পেয়েছিলাম। এরপর আর গরুর মাংস খাইনি। বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে আধা কেজি কেনার চেষ্টা করছি। কিন্তু কসাই আধা কেজি বিক্রি করতে চান না।
তিনি বলেন, স্ত্রী ও দুই ছেলে–মেয়ে মিলে চারজনের সংসার আমার। ইয়াবা কারবারিদের কাছে অনেক টাকা থাকায় তাদের গায়ে লাগে না। কিন্তু আমরা সারাদিন মাথার ঘাম মাটিতে ফেলে টাকা উপার্জন করি। তাদের গায়ে না লাগলেও আমাদের মতো দিনমজুরদের গায়ে লাগে।
বাজারের ভেতর একটি মাংসের দোকান আছে। বাজারের বাইরের দোকানগুলোয় ৮৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও নামবিহীন ওই দোকানে এক হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। দোকানের বিক্রয়কর্মী বলেন, আমাদের দোকানের মাংসে পানি নেই। ওজনেও সঠিক পাবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ চৌধুরী বলেন, আমাদের টিম প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং করে যাচ্ছে। আমাদের কাছে সঠিক অভিযোগ আসলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
সংকলিত