আজ- বৃহস্পতিবার, ১০ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Shotto Barta Logo

শিরোনাম

নাটোরে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী ৩০ বছর পর গ্রেফতার

সত্যবার্তা ডেস্ক

গত ১৭ মে ১৯৯২ ইং তারিখ আনুমানিক ১১:৩০ ঘটিকায় নাটোর জেলার নলডাঙ্গা থানাধীন বারনই নদীতে শাজাহান আলী ওরফে সোহরাব হোসেন স্বপন (৫৪) কর্তৃক প্রকাশ্য দিবালোকে ছুরিকাঘাতে শাহাদত আলী (৩২) পিতা- মৃত সমজান আলী, সাং- নলডাঙ্গা, থানা ও জেলা নাটোর নির্মমভাবে নিহত হন। মৃত শাহাদত (৩২) স্থানীয় নলডাঙ্গা বাজারে মাইক ও ব্যাটারি সার্ভিসিং এর দোকান এবং পাশাপাশি মাছের ব্যবসা করতো। তিনি ০১ মেয়ে ও ০২ ছেলে সন্তানের জনক ছিলেন। তার মৃত্যুকালে মেয়ে শারমিন সুলতানা সাথীর বয়স ০৫ বছর, ছেলে মোঃ আব্দুল রউফ বাপ্পীর বয়স ০৩ বছর এবং ছোট ছেলে মোঃ বাবলা হাসান এর বয়স ০৭ মাস ছিল।

উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে তার ভাই মোঃ সেকেন্দার আলী বাদী হয়ে নাটোর জেলার সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার‌ নম্বর- ১২, তারিখ ১৭ মে ১৯৯২, জিআর- ৯৪/৯২ (নাটোর) ধারা- ৩০২ পেনাল কোড। উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা একমাত্র আসামী শাজাহান’কে অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ১৯৯৫ সালের ২৯ মে নাটোর জেলার বিজ্ঞ জেলা সেশন আদালত অভিযুক্ত শাজাহান আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০০০/- টাকা জরিমানা অনাদায় আরো এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন। উক্ত হত্যাকাণ্ডের পর হতে আসামী শাজাহান আত্মগোপনে চলে যায়। দীর্ঘদিন অর্থাৎ ৩০ বছর ধরে পলাতক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী শাজাহান আলীকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে র‍্যাব উদ্যোগী হয়ে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‍্যাব-৫ সিপিসি-২ নাটোর ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল বিশেষ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অদ্য ২৩ জুলাই ২০২২ ইং তারিখ ০৬:০০ ঘটিকায় সিরাজগঞ্জ জেলার হাটিকুমরুল এলাকা হতে কোম্পানী অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ফরহাদ হোসেন এবং কোম্পানী উপ-অধিনায়ক মোঃ রফিকুল ইসলাম এর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী শাজাহান আলী ওরফে সোহরাব হোসেন স্বপন (৫৪) পিতা- মৃত হোসেন আলী, স্থায়ী ঠিকানা সাং- নলডাঙ্গা (পশ্চিম সোনা পাতিল, ২নং মাধনগর ইউনিয়ন) থানা- নলডাঙ্গা, জেলা- নাটোর, বর্তমান ঠিকানা সাং- পূর্ব কাটাবাড়ী, থানা- ফুলবাড়ী, জেলা- দিনাজপুর’কে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত শাজাহান আলী ওরফে সোহরাব হোসেন স্বপন (৫৪) স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিল। অতঃপর ১৯৯২ সালে শাজাহান পার্শ্ববর্তী গ্রামে জনৈকা ফিরোজা বেগম কে বিয়ে করে। উক্ত বিয়ে’কে কেন্দ্র করে শাজাহান এবং মৃত শাহাদাতের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। সৃষ্ট বিরোধকে কেন্দ্র করে গত ১৭ মে ১৯৯২ ইং তারিখ আনুমানিক ১১:৩০ ঘটিকায় বারনই নদীতে মৃত শাজাহান গোসলের উদ্দেশ্যে নামলে পূর্বেই নদীতে অবস্থানরত আসামী শাহজাহানের মধ্যে পূর্ব বিরোধের জের ধরে কথা কাটাকাটি হয় এবং একপর্যায়ে আসামী শাজাহান তার হাতে থাকা ছুরি দিয়ে মৃত শাহাদাত এর বুকে উপর্যপুরি আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন গুরুতর জখমী অবস্থায় শাহাদত’কে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে শাহাদাত মৃত্যুবরণ করেন।

গ্রেফতারকৃত শাহজাহান আলী দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি পৌরসভায় নিজ পরিচয় গোপন করে “সোহরাব হোসেন স্বপন” নামে পরিচয় দিত। এছাড়া দিনাজপুরে সে তার আদি নিবাস “রংপুর” বলে সবাইকে জানাত। প্রাথমিক পর্যায়ে সে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী এলাকায় বিভিন্ন কার্যক্রম করলেও গত ১০ বছর ধরে গাজীপুরে গার্মেন্টস কারখানায় কাজ করছে। দিনাজপুর ফুলবাড়ীতে অবস্থানকালে সে তার নিজ নাম শাজাহানের পরিবর্তে “সোহরাব হোসেন স্বপন” নামে একটি ভুয়া জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করে। সে দিনাজপুর ও ঢাকায় অবস্থান করলেও গোপনে নিজ এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। গ্রেফতারকৃত শাহজাহান’কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, শাজাহান জনৈকা ফিরোজা বেগম কে বিয়ে করার কারণে শাহাদতের সাথে তার বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং ঘটনার দিন উক্ত বিরোধের জের ধরে কথা কাটাকাটি হয় এবং এক পর্যায়ে আসামী শাজাহান তার হাতে থাকা ছুরি দিয়ে শাহাদত (৩২) এর বুকে উপর্যপুরি আঘাত করে পালিয়ে যায়।

শেয়ার করুন :

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

এই রকম আরোও খবর