সত্যবার্তা ডেস্ক :
নাটোর গুরুদাসপুরে চাঞ্চল্যকর অন্তর হত্যা মামলার আসামী র্যাবের হাতে গ্রেফতার। নাটোরের গুরুদাসপুরে উদবাড়ীয়া মাদ্রাসার ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও ২৪ ঘন্টার মধ্যে আলামত সহ ২ জন আসামীকে গ্রেফতার করেছে সিপিসি-২ র্যাব-৫। গত ১৬ এপ্রিল (শনিবার) রাত আনুমানিক ১১ টায় গুরুদাসপুর থানা পুলিশ ধারাবারিষা ইউনিয়নের উদবাড়ীয়া দাখিল মাদ্রাসার চত্বর হতে অজ্ঞাত যুবক (বয়স আনুমানিক ২০ বছর) এর লাশ উদ্ধার করেছিলো। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হয় কে বা কাহারা অজ্ঞাত যুবককে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। গুরুদাসপুর থানা পুলিশ অজ্ঞাত লাশের শনাক্তের প্রচেষ্টা হিসেবে লাশের ছবি পাশ্ববর্তী পাবনা জেলার চাটমোহর থানার বিট পুলিশ অফিসারের নিকট পাঠালে বিট অফিসার উক্ত ব্যক্তির পরিচয় সনাক্ত করে এবং মৃত ব্যক্তির নাম অন্তর (২০) পিতা- মোঃ ছবের আলী, সাং- পাতাইলহাট, থানা- চাটমোহর, জেলা- পাবনা বলে জানায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, অনেক আগে মৃত অন্তর এর পিতা-মাতার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে। অন্তর সে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজ করত এবং তার নিজ পরিবারের সাথে তেমন কোন যোগাযোগ ছিল না।
গুরুদাসপুর উদবাড়ীয়া মাদ্রাসার বারান্দায় অজ্ঞাত যুবকের লাশ প্রাপ্তির সংবাদ টি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলে র্যাব-৫ নাটোর ক্যাম্প ঘটনাস্থল পরিদর্শন সহ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের ছায়াতদন্ত শুরু করে। র্যাব-৫ সিপিসি-২ নাটোর ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল কোম্পানী অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ফরহাদ হোসেন এবং কোম্পানী উপ-অধিনায়ক মোঃ রফিকুল ইসলাম এর নেতৃত্বে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় উক্ত অজ্ঞাত যুবক হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়। অদ্য ১৮-০৪-২০২২ ইং তারিখ সময় ১০:০০ ঘটিকা হইতে ১৯-০৪-২০২২ তারিখ ভোর ০৫:০০ ঘটিকা পর্যন্ত র্যাব-৫ সিপিসি-২ নাটোর ক্যাম্পের আভিযানিক দল চাটমোহর ও সিরাজগঞ্জ জেলায় অভিযান চালিয়ে অন্তর হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত আসামী ১/ মোঃ এরশাদ আলী আকাশ সুইপার (৩৪) পিতা- মৃত তাছের উদ্দিন, সাং- গোপালবাটি, থানা- আত্রাই ও জেলা- নওগাঁ, বর্তমান ঠিকানা গুয়াখাড়া বাজার, মহেলা স্টেশন, চাটমোহর পাবনা ও ২/ মোঃ রিপন সরকার (৩২) পিতা- আকবর সরকার, সাং- পাটচাটরা, চাটমোহরদ্বয়কে গুয়াখাড়া স্টেশন বাজার হইতে ১৯-০৪-২০২২ তারিখ ০২:০০ ঘটিকায় আটক এবং হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত (ক) মোবাইল-০২ টি (খ) সীমকার্ড- ৪ টি (গ) মেমোরীকার্ড- ১ টি জব্দ করা হয়। আটককৃত আসামী ১/ মোঃ এরশাদ আলী আকাশ সুইপার (৩৪) ও ২/ রিপন সরকার (৩২) কে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সাক্ষীদের সম্মুখে তারা অন্তর (২০) কে হত্যা করার কথা স্বীকার করে। পরবর্তীতে তাদের ঘটনাস্থল উদবাড়ীয়া দাখিল মাদ্রাসায় উপস্থিত করা হলে আসামীদ্বয় হত্যাকাণ্ডের পূর্নাঙ্গ বর্ণনা দেয় এবং আসামীদের দেখানো মতে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের পূর্বকোণ হইতে আসামী এরশাদের দেখানো মতে অন্তর এর পরিহিত কালো শার্ট সহ পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহৃত দুটি টিনের বালতি উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার বর্ণনা- গ্রেফতারকৃত আসামীদের ভাষ্যমতে, ১/ মোঃ এরশাদ আলী আকাশ সুইপার (৩৪) ও ২/ রিপন সরকার (৩২) মহেলা বাজার রেলওয়ে স্টেশন চাটমোহর এলাকায় একসাথে বসবাস করত। সেই সুবাদে ভিকটিম অন্তর (২০) এর সাথে পরিচয় হয়। মূলত রিপন সরকার বাজারে জিলাপির ব্যবসা করলেও এর আড়ালে গোপনে মাদকের ব্যবসা করত। মৃত অন্তর, রিপন ও এরশাদ সুইপার মাদক সেবনে অভ্যস্ত ছিল। আসামী এরশাদের ভাষ্যমতে, রিপনের সাথে ভিকটিম অন্তরের মাদক নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। ফলে আসামী রিপন ঘটনার দিন শনিবার ১৬-০৪-২০২২ ইং তারিখে ভোর আনুমানিক ০৫:৩০ ঘটিকার সময় অন্তর কে আসামী এরশাদের ব্যবহৃত ফোন দিয়ে ফোন দেয় এবং কাজ আছে বলে জানায়। পরবর্তীতে অন্তর বিকাল আনুমানিক ১৫:৩০ ঘটিকার সময় চাটমোহর বাজারে রিপন এবং এরশাদের সাথে দেখা করে এবং তারা একটি জায়গা হতে চারটি বোতলে আনুমানিক ৪ লিটার চোলাই মদ সংগ্রহ করে। রিপন ও এরশাদ কৌশলে অন্তরের মদের বোতলে ঘুমের ঔষুধ মিশ্রিত করে এবং পরবর্তীতে তারা ৩ জন সিএনজি নিয়ে বিকাল আনুমানিক ১৭:৩০ ঘটিকায় গুরুদাসপুর থানার উদবাড়ীয়া ধারাবারিষা এলাকায় আসে এবং ঘুরাঘুরি করে। রাত আনুমানিক ২০:০০ ঘটিকায় তারা ৩ জন উদবাড়ীয়া মাদ্রাসার বারান্দায় পলিথিন বিছিয়ে এবং মশার কয়েল জ্বালিয়ে তাদের কাছে থাকা চোলাই মদ ৪ বোতল সেবন করে। চোলাই মদ সেবনের পর অন্তর অচেতন হয়ে পড়লে এরশাদ ও রিপন তাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অন্তরের পরিহিত শার্টটি খুলে ২ জন দুইদিক থেকে অন্তরের গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর এরশাদ ভিকটিমের শার্ট তার বালতিতে করে উল্লাপাড়া সিরাজগঞ্জ এবং রিপন তার নিজ বাড়ী চাটমোহর চলে যায়।