সত্য বার্তা ডেস্ক :
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ধোপাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা ও সহকারী শিক্ষকরা প্রতিদিন আসেন দেরি করে। যথাসময়ে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা হয় না। ওই প্রাথমিক বিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীদের অধিকাংশরাই জানে না জাতীয় সংগীত এমনকি কত দিন আগে স্কুলে জাতীয় সংগীত পড়ানো হয়েছে সেটাও ভুলে গেছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (৭ আগস্ট) এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে মিলে এর সত্যতা। সকাল ৯ টার সময় মাত্র একজন সহকারী শিক্ষিকা ছাড়া আর কোন শিক্ষক-শিক্ষিকা উপস্থিত ছিল না ক্লাসে। পরে কোন শিক্ষক আসে বেলা সাড়ে ৯ টায় আবার কেউ বেলা ১০ টার সময় বিদ্যালয়টিতে আসতে দেখা গেছে। আবার কেউ সকাল দশটার দিকেও স্কুলে ঢুকছেন। যেন নিজের ইচ্ছে মত চলে ওই স্কুলের কার্যক্রম। স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকা তিনিও এসেছেন ৯:৩৩ মিনিটে। ওই বিদ্যালয়ের একই চিত্র প্রতিদিনের। বিদ্যালয়টির শ্রেণীকক্ষ প্রাইভেট পড়ানোর জন্য ভাড়া দেওয়ার মতো অভিযোগ উঠেছে ধোপাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোছাঃ ফারুকনাজ বেগম এর উপর। প্রধান শিক্ষিকা ও সহকারী শিক্ষকরা ঘড়ির কাঁটায় সময় যতই বাজুক, স্কুলে উপস্থিত হয়ে হাজিরা খাতায় সই করছেন সকাল ৯ টায় উপস্থিত দেখিয়ে।
এরপর সোমবার স্কুলটিতে সাংবাদিকরা হাজির হয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে শুনতে চায় জাতীয় সংগীত। কোন শিক্ষার্থী জাতীয় সংগীত বলতে পারছেন না। এমনকি শিক্ষার্থীরা শিক্ষার দিক থেকে রয়েছে অনেক পিছিয়ে। তবে ওই স্কুলটির শ্রেণিকক্ষ ভাড়া দেওয়া হয়েছে অন্য আরেকটি স্কুলের শিক্ষক অমল ঘোষ এর কাছে। তিনি সকাল-বিকাল দুই বেলা প্রাইভেট পড়ায় সেখানে। বিনিময়ে ভাড়া পান ধোপাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষিকা মোছাঃ ফারুকনাজ বেগম।
ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষার যখন এই বেহাল অবস্থা। তখন সাংবাদিকরা বিষয়টি জানতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে গেলে, দেখা যায় তিনিও নেই অফিসে। তখন ঘড়ির কাটায় বাজে বেলা ১১ টা। তার বাসায় নাকি এসেছে আত্মীয়-স্বজন তিনিও শিক্ষা অফিস ছেড়ে বাসায় করছেন আত্মীয়তা। অফিসে আসতে পারবেন দুপুর ১২ টার দিকে।
শিক্ষা ব্যবস্থার যখন এই পরিস্থিতি, তখন শিক্ষা কর্মকর্তাও বাসায়। তবে কি এভাবেই চলবে এই বিদ্যালয় এর শিক্ষা ব্যবস্থা এমনটাই প্রশ্ন করছেন অভিভাবক ও স্থানীয় এলাকাবাসী। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষিকা সহ শিক্ষকরা বলছেন বিভিন্ন কারণে তাদের এভাবে স্কুলে আসতে দেরি হয়।
শ্রেণিকক্ষ ভাড়া নিয়ে প্রাইভেট পড়ানো, অন্য আরেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অমল ঘোষ তিনি বলেন, আমি সকাল ৮:৫০ মিনিটে প্রাইভেট পড়ানোর কাজ শেষ করি। তারপর আমার স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। স্কুলের নির্ধারিত সময় পার হয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন অল্প একটু সময় পার হয়। তেমন একটা সমস্যা হয়না।
এতো কিছুর পরেও কোন এক অদৃশ্য শক্তির কারণে হাস্যোজ্জ্বল মুখেই সাংবাদিকদের বলছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ বি এম ছানোয়ার হোসেন, আমি অফিসে নাই মানে এদিকে একটু সমস্যার মধ্যে আছি। আমার আসতে প্রায় ১২ টা বাজতে পারে। প্রতিদিন আমার দেরি হয় না, আজকে আমার বাসায় গেস্ট এসেছে। আপনি লিখিত অভিযোগ দিয়ে যান আমি ব্যবস্থা নেব। এছাড়াও আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম ইনশাল্লাহ আমরা অ্যাকশনে যাব।
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একে এম নূর হোসেন নির্ঝর তিনি জানান, অনিয়ম কোন প্রতিষ্ঠানেই কাম্য নয় শ্রেণিকক্ষ ভাড়া দেওয়া রীতিমতো খুবই খারাপ কাজ, বিষয়টি আমি দেখছি।
এ বিষয়ে আরো জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: সাইদুল ইসলাম বলেন, কিছু জায়গা থেকে এমন অভিযোগ আসছে। আপনারা যেগুলো বলছেন এগুলো অবশ্যই গুরুতর অভিযোগ। তবে লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এছাড়াও বিষয়টি নিয়ে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।