সত্যবার্তা ডেস্ক :
একটা সময় ছিল, প্রেমপত্র আর লাল গোলাপ দিয়ে প্রেমিকাকে প্রেম নিবেদন করা হতো। সারারাত জেগে দ্যুতিময় ভাষায় লেখা সে চিঠিতে মুগ্ধ হতেন প্রেমিকাও। পাশাপাশি প্রেমিকার চিঠি পাওয়ার প্রতীক্ষাও যেন ফুরাত না প্রেমিকের। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে এখন আর সেই আবেগমাখা চিঠির চল নেই। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে মোবাইল ফোনেই হয় বেশির ভাগ প্রেম নিবেদন। প্রায় সময় চেনা নেই, জানা নেই এমন মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে গভীর প্রেমের সম্পর্ক। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তরুণীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করেন অনেকেই। তেমনই একজন মেহমুদ হাসান রিয়াদ (৩১)।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া পরিচয় দিয়ে তরুণীদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলা তার কাছে যেন পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সম্পর্ক গড়ার পর মোবাইলে কথোপকথনের অডিও/ভিডিও রেকর্ড করে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে ব্লাকমেইলের ফাঁদ পাততেন। এভাবে গত ২ বছরে কমপক্ষে ৬০ তরুণীর কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে এই সাইবার প্রতারককে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। এ সময় তার কাছ থেকে ব্লাকমেইলে ব্যবহৃত ২টি মোবাইল ও ভুয়া ফেসবুক আইডি জব্দ করা হয়েছে।
ডিবি পুলিশ বলছে, প্রতারক রিয়াদ নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র পরিচয় দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতেন। তারপর কৌশলে কথার জালে ফাঁসিয়ে তাদের কাছ থেকে আপত্তিকর অশ্লীল ছবি ও ভিডিও মেসেঞ্জারের মাধ্যমে নিতেন। তাছাড়া কথা বলার সময় অডিও রেকর্ড করে রাখতেন। ভিডিওকলে কথা বলে সেগুলো স্ক্রিন রেকর্ডার দিয়ে রেকর্ড করাতেন। তারপর বিভিন্ন অজুহাতে তাদের কাছ থেকে টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী দাবি করতেন। ভুক্তভোগী তরুণী প্রতারকের ফাঁদ বুঝতে পেরে যখন সম্পর্ক রাখতে চাইত না তখন ধারণকৃত ওই অডিও/ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা দাবি করতেন।
রিয়াদের প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে ব্লাকমেইলের শিকার হন ছালমা (ছদ্মনাম) নামে এক তরুণী। তার কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেছিল রিয়াদ। গত বুধবার (২ মার্চ) ছালমা ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, রিয়াদের সঙ্গে আমার ৬/৭ মাস আগে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সময় রিয়াদ নিজেকে ঢাবির সিএসই বিভাগের ছাত্র বলে পরিচয় দেয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে রিয়াদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সময় মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে কথা হতো। মোবাইলে কথা বলার সময় আমার অজান্তেই রিয়াদ সব অডিও ও ভিডিও কথোপকথন রেকর্ড করে রাখে। পরবর্তী সময়ে আমি জানতে পারি, রিয়াদ প্রকৃতপক্ষে ঢাবির ছাত্র নয়, মোবাইল ফোনে ভুয়া পরিচয় দিয়েছে। এ কারণে তার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেই। এ সময় রিয়াদ আমার হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন হুমকিমূলক মেসেজ পাঠাত এবং আমার ক্ষতি করার জন্য রেকর্ড করে রাখা সব অডিও/ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিতে থাকে। আমার ক্ষতি না করার জন্য রিয়াদকে অনুরোধ করলে, সে আবার হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করত। ওই টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় সে হুমকি অব্যাহত রাখে।
এ বিষয়ে ডিবির সাইবার এন্ড সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) নাজমুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, ধানমন্ডি থানায় দায়ের হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলার তদন্তে নেমে রিয়াদকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিয়াদ ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে অর্ধশতাধিক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে ব্লাকমেইলের ফাঁদে ফেলতেন বলে স্বীকার করেছে। তার মোবাইল ফোনেও এ ধরনের প্রতারণামূলক ঘটনার অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে।