সত্যবার্তা ডেস্ক :
বাজারে ভোজ্যতেল নিয়ে চলছে তেলেসমাতি। সরকারের কঠোর হুঁশিয়ারির মধ্যেও চলছে কারসাজি। তেল মজুত করা হচ্ছে গুদামে। রোজার মাস সামনে রেখে বাড়তি মুনাফার লোভে ড্রাম ও বোতলজাত সয়াবিন তেল মজুতের খবর রয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে। রাজধানীসহ সারাদেশে এ নিয়ে রয়েছে তাদের নজরদারি, চলছে অভিযান। এরই মধ্যে কারা কোন কৌশলে কীভাবে তেল মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে, দাম বাড়াতে পারে তার একাধিক তালিকা করা হয়েছে। আমদানিকারক ও ডিলারের পাশাপাশি পাইকারি এবং খুচরা বিক্রেতাদের অনেকে আছে এ চক্রে। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে তৈরি করা তালিকা ধরে চলছে যাচাই-বাছাই। আছে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত গোয়েন্দা নজরদারি। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে অভিযান। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে চালানো অভিযানে এক সরকারি কর্মকর্তার কাছে মিলেছে বিপুল পরিমাণ ভোজ্যতেল।
ডিএমপি তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার
সরকার গতকাল শনিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এই তেল মজুতকারীকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, লালমাটিয়ার একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন সরকারি কর্মকর্তা লায়েকুজ্জামান। এর কাছাকাছি মোহাম্মদপুরে তার শ্বশুরের বাড়িটিও তিনি দেখাশোনা করতেন। সেই বাড়িতেই তিনি ৫১২ লিটার সয়াবিন তেল মজুত করেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুর থানার এসআই মনিরের নেতৃত্বে একটি টিম গত শুক্রবার রাতে ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে সেই তেল জব্দসহ লায়েকুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লায়েকুজ্জামান জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তিপর্যায়ে এই তেল কিনে মজুত করে রেখেছেন। তার কাছে এসব তেল কেনার রশিদ দেখতে চাইলে তিনি মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের সূর্য এন্টারপ্রাইজের একটি রশিদ দেখান। পরে রশিদটি যাচাই করে দেখা গেছে সেখান থেকে ১৫৯ টাকা দরে মাত্র ৪০ লিটার সয়াবিন তেল কিনেছেন তিনি। বাকি তেল তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেছেন। আর সূর্য এন্টারপ্রাইজের ওই রশিদের মাঝখানে নিজ হাতে বাকি তেলের পরিমাণ লিখে বিভিন্ন দাম বসিয়ে দিয়েছেন।
ডিএমপি তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বলেন, গ্রেপ্তারকৃত লায়েকুজ্জামান মনে করেছেন যেহেতু বর্তমানে তেলের দাম বাড়তির দিকে, কয়েক দিন পর রমজানে আরো বাড়বে সে কারণে বাড়তি মুনাফার আশায় তিনি এই সয়াবিন তেল কিনে মজুত করেছিলেন। পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, লায়েকুজ্জামানের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ মামলায় তাকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে। রিমান্ড পেলে তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করলে অতীতেও তিনি এমন কাজ করেছেন কিনা, কিংবা তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানা যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বিপ্লব কুমার সরকার জানান, লায়েকুজ্জামান কোনো ব্যবসায়ী নন, ডিলারও নন। প্রাথমিকভাবে এটি তার ব্যক্তিগত অসৎ উদ্দেশ্য বলেই মনে হয়েছে। অতিরিক্ত লাভের আশায় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে তিনি তেল মজুত করেছেন। ৫১২ লিটার তেল মজুত করা ফৌজদারি অপরাধ, এটি সংকট সৃষ্টির অপপ্রয়াস। ৪০ লিটার তেল এক দোকান থেকে কিনেছেন, বাকিগুলো কোথা থেকে কীভাবে সংগ্রহ করেছেন তা জিজ্ঞাসাবাদে স্পষ্ট হওয়া যাবে। প্রাথমিকভাবে তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কৃষি মার্কেটের ওই ব্যবসায়ী কেন একজনের কাছে একবারে ৪০ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি করলেন এ বিষয়ে ওই ব্যবসায়ীকেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব।
তেজগাঁও বিভাগের এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো বলেন, এছাড়া ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে ব্যবসায়িক পর্যায়ে কেউ মজুতদারি করছে কিনা, প্রতিনিয়ত মনিটরিং করে যাচ্ছি। আমরা যখনই সংবাদ পাব অভিযান চালাব। গত ৬ মার্চ থেকে ৬ দিনে লায়েকুজ্জামান বিপুল পরিমাণ সয়াবিন মজুত করেছেন জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ৪০ লিটারের বাইরে বাকি তেলগুলো কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন এ বিষয়ে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। জনসাধারণকে কষ্ট দেয়ার জন্য এ ধরনের মজুতদারি করে যারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।