সত্যবার্তা ডেস্ক:
নাটোরের সিংড়ায় প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নকল স্বর্নের মূর্তি বিক্রয় করার অভিযোগে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় ৭ জন সদস্য কে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গতকাল রবিবার রাত আনুমানিক পৌনে ৯ টার সময় ভিকটিম মোঃ তরিকুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৫ সিপিসি-২ নাটোর ক্যাম্পের কোম্পানী অধিনায়ক মোঃ ফরহাদ হোসেন এবং কোম্পানী উপ-অধিনায়ক মোঃ রফিকুল ইসলাম এর নেতৃত্বে সিংড়া থানাধীন পিপলসন দড়িপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী ১| মোঃ মন্টু (৪০) পিতা- মৃত ফয়েজ উদ্দিন প্রামাণিক, ২| মোঃ মুকুল (৪৪) পিতা- মৃত ফয়েজ উদ্দিন প্রামাণিক, ৩| মোঃ শফিকুল (৩০) পিতা- মৃত ফয়েজ উদ্দিন প্রামাণিক, ৪| মোহাম্মদ আলী (৪০) পিতা- মৃত আজাহার আলী, ৫| মোঃ জাহিদুল ইসলাম (৫৫) পিতা- মৃত সেকেন্দার প্রামাণিক, ৬| মোঃ রজিম আহমেদ (২২) পিতা- মৃত ছহির উদ্দিন, সর্ব সাং- পিপলসন, থানা- সিংড়া, জেলা- নাটোর, ৭| মোঃ আনোয়ার হোসেন (৩৮) পিতা- মৃত আবু বক্কর, সাং- লাঙ্গল মোড়া, থানা- শেরপুর, জেলা বগুড়া কে একটি নকল স্বর্নের মূর্তি সহ গ্রেফতার করা হয় এবং ৪ জন প্রতারক চক্রের সদস্য সুকৌশলে ঘটনা স্থল থেকে পালিয়ে যায়।
উল্লেখ্য যে, প্রতারণার শিকার ভিকটিম মোঃ তরিকুল ইসলাম (২৮) পিতা- মোঃ মহসিন আলী, সাং- সালামপুর, থানা- লালপুর, জেলা নাটোর। তিনি অভিযোগ করেন, চলতি বছরের মার্চ মাসের শুরুতে রাজশাহী জেলার বাঘা থানাধীন শাহদোলা মাজার জিয়ারত এর সময় প্রতারক চক্রের একজন সদস্যের সঙ্গে পরিচয় হয় এবং মোবাইল নাম্বার আদান-প্রদান হয়। পরবর্তীতে প্রতারক চক্র বিভিন্ন সময়ে ফোন দিয়ে ভিকটিম এর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং তাদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানায়। ভিকটিম আগস্ট মাসের কোন এক তারিখে আসামীদের বাড়িতে দাওয়াত খেতে আসে এবং খাওয়া দাওয়া শেষে একটু ঘুরাঘুরি করে নিজ বাড়িতে চলে যায়।
পরবর্তীতে প্রতারক চক্র ভিকটিম কে ফোন করে জানায় যে, তাদের এক আত্মীয়ের পুকুর খননের সময় একটি স্বর্নের মূর্তি পাওয়া গেছে এবং সেই মূর্তি’টি ভিকটিম এর কাছে অল্প দামে বিক্রি করার প্রস্তাব দেন। পরে ভিকটিম আসামীদের কথা শুনে সিংড়ায় আসে এবং প্রতারক’রা পুতুল টি দেখায় ভিকটিম প্রথমে বিশ্বাস করেনা তখন আসামীরা পুতুলের ডান হাতের সামান্য একটু অংশ কেটে দেয় এবং ভিকটিম কে বলে বাড়িতে গিয়ে পরিক্ষা করে দেখতে। পরে ভিকটিম বাড়িতে গিয়ে তার পরিচিত একটি স্বর্ণকারের দোকানে গিয়ে পরিক্ষা করে এবং দোকানদার জানায় সোনা আসল। এরপর ভিকটিম আটককৃত ও পলাতক আসামীদের উপস্থিতিতে দুই লক্ষ বিশ হাজার টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে যায়। বাড়িতে গিয়ে স্বর্ণকারের দোকানে পরিক্ষা করলে দোকানদার বলে যে এই পুতুলের মধ্যে স্বর্ণের কোন অস্তিত্ব নেই।
প্রতারণার শিকার ভিকটিম আসামীদের কাছে প্রদত্ত টাকা ফেরত চাইলে আসামীরা টাকা ফেরত দিতে কালক্ষেপণ করতে থাকে, এমত অবস্থায় গতকাল রবিবার বিকাল আনুমানিক ৪ টার সময় ভিকটিম নকল স্বর্নের মূর্তি নিয়ে তাদের বাড়িতে আসে এবং তার দেওয়া টাকা ফেরত চায়। তখন সকল আসামীদের যোগসাজশে ভিকটিম কে বিভিন্ন ভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং মেরে ফেলার হুমকি দিলে জীবন রক্ষার্থে ভিকটিম সেখান থেকে পালিয়ে জামতলা বাজারে এসে র্যাবের টহল গাড়ি দেখতে পেয়ে র্যাব সদস্যের বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলে। পরবর্তীতে র্যাবের একটি আভিযানিক দল রাত আনুমানিক পৌনে ৯ টার সময় সিংড়া থানাধীন ডাহিয়া ইউনিয়নের পিপলসন দড়িপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নকল স্বর্নের মূর্তি সহ সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের ৭ জন সদস্য কে গ্রেফতার করে।
র্যাব-৫ সিপিসি-২ নাটোর ক্যাম্পের কোম্পানী অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ফরহাদ হোসেন জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীরা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। গ্রেফতারকৃত ও পলাতক আসামীদের যোগসাজশে দেশের বিভিন্ন এলাকার সহজ সরল লোকজন কে টার্গেট করে, মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন লোকের নিকট থেকে সোনালী রঙের পুতুলকে স্বর্ণের পুতুল বলে বিশ্বাস করিয়ে। প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করিয়া লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় তাদের পেশা।