আজ- রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Shotto Barta Logo

শিরোনাম

৫০ বছর পর মুক্তিযোদ্ধার সনদ উদ্ধার,তালিকাভুক্ত হতে ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে!

সত্যবার্তা ডেস্ক :
মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন প্রায় ২০ বছরের তরুণ। স্থানীয় এক কমান্ডারের তত্বাবধানে ৮ দিনের ট্রেনিং নিয়ে যোগদেন মুক্তিযুদ্ধে। দেশের বিজয় অর্জনের পর অর্জন করেন সনদ। ওই সনদটি জমা,দেন মায়ের কাছে। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ৫০ বছর। বিশেষত আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে যখন মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন শুরু হয়,তখন খোঁজ করতে থাকেন ওই সনদ। কেননা,ওই সনদ না হলে তালিকাভুক্ত বা গেজেটভুক্ত হতে পারবেননা। কিন্তু বয়সভারে ন্যুব্জ মা মনে করতে পারেননা কোথায় রোখেছেন সেই সনদটি। এরপর মা মারা গেছেন ৪ বছর আগে। পেশায় কৃষক ওই মুক্তিযোদ্ধা তার মার মৃত্যুর পর বাড়ির আনাচে-কানাচে সমস্ত কাগজপত্র সন্ধান করতে গিয়ে সম্প্রতি পেয়েছেন সেই সনদটি। এখন মুক্তিযোদ্ধা,হিসাবে তালিকাভুক্ত হতে তিনি ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে!
মুক্তিযোদ্ধা দাবী করা ওই ব্যক্তির নাম আব্দুল গাফ্ফার। তিনি সদর উপজেলার সুলতানপুর এলাকার গোদাই মন্ডলের ছেলে। আব্দুল গাফ্ফার জানান,মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর নিজ এলাকার সিরাজুলের বাড়িতে আশ্রয় নেয় বেশ কিছু সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা। তাদের সহযোগী হিসাবে তিনি প্রথমে কাজ শুরু করেন। এরপর বালিয়াকান্দি এলাকায় আবুল কমান্ডারের তত্বাবধানে তিনি ৮ দিনের ট্রেনিং নেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ঝলমলিয়া,হালতি,জংলীর লেংগুরিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।স্বাধীনতা অর্জনের পর নাটোরের তৎকালীন আ’লীগ নেতা শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরীর নির্দেশে তারা গরুর গাড়িতে করে গাদা,বন্দুক জমা,দেন। কিছুদিন পর শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরী তাকে সনদ দেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সুলতানপুরের পার্শ্ববর্তি গোকুলপুর এলাকার বাসিন্দা,মন্তাজ মন্ডলের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা ভাদু মন্ডল জানান,মুক্তিযুদ্ধের আগে তিনি বিডিআর এ চাকুরী করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি রাজশাহী অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। বর্তমানে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সরকারের সকল সুবিধা ও সম্মান পাচ্ছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,দেশ স্বাধীনের পর এলাকায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে গাফ্ফারের যুদ্ধে অংশ নেয়ার কথা,অনেক শুনেছেন। তৎকালীন আ’লীগ নেতা শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরীর সনদ দেয়ার কথাও জানেন। এছাড়া নাটোর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার,তার অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমানের কাছেও গাফ্ফারের যুদ্ধে অংশ নেয়ার কথা শুনেছেন। এমন অবস্থায় গাফ্ফারকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকাভুক্তি ও গেজেটভুক্তির মাধ্যমে তাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি প্রদান করা উচিৎ বলে দাবী করেন তিনি। ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক গাফ্ফারের এখন দিন কাটে কৃষি কাজ করে। ইতোমধ্যে বিয়ে দিয়েছেন দুই মেয়েসহ ৩ ছেলেকে। অভাবের তাড়নায় দিন মজুরী করে সংসার চালাতে গিয়ে পড়ালেখা করাতে পারেননি কোন সন্তানকে। তাই বাবার পথ ধরে সন্তানরাও এখন দিন মজুর। স্থানীয় ৫ নং ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলাউদ্দিন জানান,গাফ্ফারের বড় ছেলে নূর মোহাম্মদের স্ত্রী দীর্ঘ দিন থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত। বয়সভারে ন্যুব্জ মুক্তিযোদ্ধা গাফ্ফারও এখন তেমন কাজ করতে পারেননা।
এমন অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকাবুক্ত হয়ে,সরকারী সহযোগীতা,পেলে বাঁকি জীবনটা সুখে কাটতো। এব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আশু পদক্ষেপ কামনা করেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা গাফ্ফারের দাবী,জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেছি। এখন শেষ জীবনে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি চাই। চাই মুক্তিযোদ্ধার সম্মান৷ এব্যাপারে দিক নির্দেশনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহবান এবং মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের পদক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

শেয়ার করুন :

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

এই রকম আরোও খবর

সাক্ষাৎকার