জলবায়ু সম্মেলন: শেষ মুহূর্তেও ব্রাজিল যেতে পারেনি সাতক্ষীরার ২ শিক্ষার্থী
ব্রাজিলের আমাজন অঞ্চলের বেলেম শহরে বসতে যাচ্ছে জাতিসংঘের শীর্ষ জলবায়ু সম্মেলন 'কপ-৩০'। সম্মেলনে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে শিশু প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলো সাতক্ষীরার দুই স্কুল শিক্ষার্থী নওশীন ইসলাম ও নূর আহমদ জিদান।মঙ্গলবার রাত ১টায় তাদের ব্রাজিলের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষমুহূর্তে এসেও ভিসা না পাওয়ায় ব্রাজিলগামী বিমানে চড়তে পারেনি তারা।১০ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া কপ ৩০ সম্মেলন চলবে আগামী ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর...
ব্রাজিলের আমাজন অঞ্চলের বেলেম শহরে বসতে যাচ্ছে জাতিসংঘের শীর্ষ জলবায়ু সম্মেলন 'কপ-৩০'। সম্মেলনে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে শিশু প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলো সাতক্ষীরার দুই স্কুল শিক্ষার্থী নওশীন ইসলাম ও নূর আহমদ জিদান।
মঙ্গলবার রাত ১টায় তাদের ব্রাজিলের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষমুহূর্তে এসেও ভিসা না পাওয়ায় ব্রাজিলগামী বিমানে চড়তে পারেনি তারা।
১০ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া কপ ৩০ সম্মেলন চলবে আগামী ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত পৃথিবীকে রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে শীর্ষ এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন ১৫০টি দেশের ১২ হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি।
জলবায়ু সম্মেলনে নওশীন ও নূরের উপকূলীয় অঞ্চলে শিশুদের জীবন সংগ্রাম ও অভিজ্ঞতা বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার কথা ছিল।
তাদের কপ ৩০ এ অংশগ্রহণের সুযোগটি এসেছিল বেসরকারি সংস্থা জাগ্রত যুব সংঘ (জেজেএস) পরিচালিত 'স্ট্রেংদেনিং চিলড্রেনস ভয়েস অ্যান্ড লিডারশিপ ইন অ্যাড্রেসিং ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডিজাস্টার রিস্ক ইন বাংলাদেশ' প্রকল্পের মাধ্যমে।
প্রকল্পের ব্যবস্থাপক নবকুমার সাহা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জাতিসংঘের ইউএনএফসিসিসি উইং থেকে আমন্ত্রণ পাওয়ার পর জাগ্রত যুব সংঘ থেকে ঢাকার ব্রাজিল দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করা হয়। গতকাল রাত একটায় বিমানের টিকেটও কেটে রাখা হয়েছিল। এছাড়া বেলেমের একটি হোটেলেও বুকিং দেওয়া হয়।'
'দূতাবাস থেকে গত ৩০ অক্টোবর প্রথম দফায় সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়। গতকাল ১০ নভেম্বর সকাল ১১টায় দূতাবাস দ্বিতীয় সাক্ষাৎকার নেয়। বিকেল ৪টার দিকে দূতাবাস জানায়, ব্রাজিল সরকারের অনুমোদন না আসায় আপাতত ভিসা দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে দুই শিশুই কপ-৩০ সম্মেলনে যোগ দিতে পারেনি।'
ভিসা না পাওয়ায় নওশীন ও নূর সাতক্ষীরায় ফিরে গেছে বলে জানান তিনি।
নবকুমার সাহা বলেন, 'সঠিক সময়ে ভিসা না পাওয়ায় বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার এই শিশুদের জলবায়ুজনিত সমস্যা বিশ্ব মঞ্চে তুলে ধরা সম্ভব হলো না। উপকূলের শিশুরা কীভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে সেই কথা জানানো গেল না।'
নওশীন ও নূর দুজনেই অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নওশীনের বাড়ি জেলার আশাশুনি উপজেলায়। ২০২১ সাল থেকে উপকূলীয় এলাকায় শিশু অধিকার ও জলবায়ু ন্যায়বিচার নিয়ে কাজ করছে নওশীন।
নূরের বাড়ি জেলার শ্যামনগর উপজেলায়। বর্তমানে সে কোস্টাল চিলড্রেনস ফোরামের কেন্দ্রীয় ও উপজেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।
এর আগে কপ ৩০ সম্মেলনে যোগদানের বিষয়ে নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে নওশীন বলেছিল, 'উপকূলের শিশুদের সংগ্রামের কথা বলব। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, খাদ্যসংকট দেখা দিচ্ছে, বাল্যবিবাহ বেড়ে গেছে। আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব।'
নূর নিজের অনুভুতির কথা জানাতে গিয়ে বলেছিল, 'সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় জীবন মানেই প্রতিদিনের লড়াই। ঘরবাড়ি হারানো, লবণাক্ত পানিতে ফসল নষ্ট হওয়া এখন আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে। আমরা বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানাব তারা যেন অতীতের ভুলের বোঝা আমাদের কাঁধে না চাপিয়ে দেয়।'