জাহানারা ইমামের বই বিক্রি: আগের প্রশাসনের ওপর দায় চাপালেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক
শহীদ জননী জাহানারা ইমামের 'ব্যক্তিগত সংগ্রহের' কিছু বই অনলাইনে বিক্রি হওয়ার ঘটনায় বাংলা একাডেমির দায় আছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম। তবে এই দায় কৌশলে বহুগুণ বাড়িয়ে বর্তমান প্রশাসনের ওপর বর্তানো 'সাংবাদিকতা নয়' বলে মন্তব্য করেন তিনি।আজ রোববার বাংলা একাডেমির ফেসবুক পেজে দেওয়া 'বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগারের জাহানারা ইমাম সংগ্রহের বই সম্পর্কিত বিতর্ক বিষয়ে বাংলা একাডেমির বক্তব্য' শীর্ষক পোস্টে এসব মন্তব্য করেন মোহাম্মদ আজম।এই ঘটনা নিয়ে গত ৮ নভেম্বর দৈনিক 'প্রথম আলো'র অনলাই...
শহীদ জননী জাহানারা ইমামের 'ব্যক্তিগত সংগ্রহের' কিছু বই অনলাইনে বিক্রি হওয়ার ঘটনায় বাংলা একাডেমির দায় আছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম।
তবে এই দায় কৌশলে বহুগুণ বাড়িয়ে বর্তমান প্রশাসনের ওপর বর্তানো 'সাংবাদিকতা নয়' বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আজ রোববার বাংলা একাডেমির ফেসবুক পেজে দেওয়া 'বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগারের জাহানারা ইমাম সংগ্রহের বই সম্পর্কিত বিতর্ক বিষয়ে বাংলা একাডেমির বক্তব্য' শীর্ষক পোস্টে এসব মন্তব্য করেন মোহাম্মদ আজম।
এই ঘটনা নিয়ে গত ৮ নভেম্বর দৈনিক 'প্রথম আলো'র অনলাইন ভার্সনে 'জাহানারা ইমামের দেওয়া বই বিক্রি করেছে বাংলা একাডেমি, এখন দাম হাঁকা হচ্ছে লাখ টাকা' শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ আজম বলেন, 'প্রতিবেদনে কিছু আংশিক সত্য উপস্থাপন করা হয়েছে; কিছু অংশ এমনভাবে হাইলাইট করা হয়েছে, যাতে প্রতিবেদনে অন্যরকম উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও পাঠক বিভ্রান্তির মধ্যে পড়বেন।'
তার ভাষ্য, বাংলা একাডেমি গত ২৫ জুন থেকে ২৩ অক্টোবর পরিত্যক্ত হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মজুতকৃত কয়েক হাজার বই ও অন্য কাগজপত্র বিধি মোতাবেক নিলামে বিক্রি করে। এ ধরনের বই-পুস্তক বহুদিন ধরে গ্রন্থাগার-সংলগ্ন একটি ঘরে গুদামজাত করা হয়। এটি পরিত্যক্ত বইয়ের গুদাম। এখানকার বইগুলোই সম্প্রতি নিলামে বিক্রি করা হয়েছে।
মোহাম্মদ আজম জানান, এসব বই এখন বিক্রি করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে এজন্য যে, এ ঘরটি সম্পূর্ণ ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। আগামী মেলায় প্রাপ্ত বই এবং অন্যসব কারণে পরিত্যক্ত হওয়া সম্ভাব্য বই রাখার কোনো জায়গা ওই ঘরে আর অবশিষ্ট ছিল না। ফলে ঘর খালি করার প্রয়োজন হয়েছিল।
তিনি বলেন, 'এখন প্রশ্ন, বাংলা একাডেমি কি জাহানারা ইমাম, আহমদ শরীফ, মুক্তাগাছা সংগ্রহ বা অন্য কোনো তালিকার বই বিক্রি করেছে? আসলে এ ধরনের কিছুই ঘটেনি।'
মোহাম্মদ আজমের দাবি, বাংলা একাডেমিতে রক্ষিত তালিকা থেকে দেখা যায়, পরিবারের পক্ষ থেকে জাহানারা ইমামের মোট ৩৫৯টি বই দেওয়া হয়েছিল। বাছাইয়ের পরে অধিকাংশ বই সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট হয়। 'বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগারে সংরক্ষণার্থে গ্রন্থ বাছাই কমিটির বাছাইকৃত গ্রহণযোগ্য বইয়ের তালিকা (জাহানারা ইমাম)' প্রণয়ন করা হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। ওই বইগুলো বাংলা একাডেমির নির্দিষ্ট সেলফে মজুদ আছে। সেখানে বইয়ের সংখ্যা ৩০৮টি। তিনতলার নির্ধারিত স্থানে যে কেউ বইগুলো দেখতে এবং ব্যবহার করতে পারবেন।
তিনি বলেন, 'বাংলা একাডেমির বর্তমান দায়িত্বরতদের সম্পর্কে বলা যায়, বইগুলো বিক্রির আগে আরেকবার পরীক্ষা করা যেত। কিন্তু বইয়ের সংখ্যা ছিল আক্ষরিক অর্থেই হাজার হাজার। তদুপরি, গুরুত্বপূর্ণ কোনো বই এখানে থাকতে পারে, এমন সম্ভাবনাও সংশ্লিষ্ট কারও অভিজ্ঞতায় ছিল না।'
'এমতাবস্থায়, প্রথম আলোর প্রতিবেদনটি উদ্দেশ্য-প্রণোদিত সাংবাদিকতার একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে' বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক আরও বলেন, 'জাহানারা ইমামসহ আমাদের দেশের শ্রদ্ধেয় মানুষদের বেশ কিছু বই বাংলা একাডেমির সিলসহ নীলক্ষেতে কিংবা অনলাইন প্লাটফর্মে বিক্রি হচ্ছে-এ ঘটনায় নিঃসন্দেহে বাংলা একাডেমির দায় আছে। কিন্তু বহু বছর আগে ঘটে যাওয়া একটা দায় কৌশলে বহুগুণ বাড়িয়ে বর্তমান প্রশাসনের ওপর বর্তানো নিশ্চয়ই সুরুচির পরিচয় নয়, সাংবাদিকতার তো নয়ই।'
এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির সচিব ড. মো. সেলিম রেজা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি একাডেমিতে যোগ দেওয়ার পর পুরনো বই বিক্রির কোনো কমিটি হয়নি, এমন বই বিক্রির প্রশ্নও আসে না। যা সংবাদে এসেছে, তা ২০১৪ সালে গঠিত কমিটির প্রস্তাবনায় ২০২১ বা ২০২২ সালের দিকে বিক্রি হতে পারে।'
'জাহানারা ইমাম বা এমন গুণী মানুষের বই উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিক্রি করা হয়নি, এটা অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়েছে' বলেও জানান তিনি।