নির্বাচনই শেষ কথা নয়, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি জরুরি: ফখরুল
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে 'ট্রানজিশনাল পিরিয়ড' উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনই শেষ কথা নয়, বরং দেশকে গণতন্ত্রে নিয়ে যাওয়া এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা জরুরি।আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।বিএনপি ও ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ সেন্টার 'চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বিএনপি' বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।অনুষ্ঠানে গণঅভ্যুত্থান নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।মির্জ...
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে 'ট্রানজিশনাল পিরিয়ড' উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনই শেষ কথা নয়, বরং দেশকে গণতন্ত্রে নিয়ে যাওয়া এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা জরুরি।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি ও ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ সেন্টার 'চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বিএনপি' বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে গণঅভ্যুত্থান নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে আমরা সবাই বুড়ো হয়ে গেলাম।'
মঞ্চে উপবিষ্ট ও দশর্ক সারিতে থাকা অতিথিদের দেখিয়ে তিনি আরও বলেন, 'এই ১৫-১৬ বছরে কিন্তু তাদের বয়স অনেক বেড়ে গেছে। এখন স্বাভাবিকভাবেই আমাদের যাদের বয়স হয়ে গেছে, আমরা অতীতটাকে মনে করতে চাইবো। একইসঙ্গে আমরা চাইবো, এই যে চব্বিশের ছাত্রগণভুত্থানের যে ফসল, এটাকে যেন যে আমরা এই দেশের মানুষের কাজে লাগাতে পারি। এই রাষ্ট্রের কাজে লাগাতে পারি।'
তিনি বলেন, 'বিএনপি একটি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। আমি জানি না যে, পৃথিবীর কোনো লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এই রকম অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন, হত্যাযজ্ঞের মধ্যে দিয়ে গেছে কি না। ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমাদের এখানে মনে একজনও নেই, যাদেরকে নিয়মিত আদালতের বারান্দায় দেখা যেত না অথবা উকিলের ঘরে যেতে দেওয়া যেত না এই ১৬ বছরে। আমাদের ২০ হাজারের মতো নেতাকর্মী শহীদ হয়ে গেছে। কেউ এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ে, কেউ আওয়ামী লীগের গুলিতে, কেউ থানার মধ্যে গুলিতে এবং কেউ ডিসঅ্যাপিয়ার করে গেছে।'
'আমরা সবাই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আজকে যদি কেউ দাবি করেন যে সংস্কারটা এককভাবে ব্যক্তিগত হবে, এটা আমার মনে হয় সংকীর্ণ ছাড়া আর কিছু হবে না কোনো দলের বা কোনো ব্যক্তির।'
'আজকে আমার মাঝে মাঝে কেন জানি না একটু হতাশ লাগে। হতাশ লাগে যখন বাংলাদেশের চারদিকে দেখতে পাই, যখন দেখি যে একদিকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য রায় দেওয়া হচ্ছে কোর্টে, অন্যদিকে দেখি একটা মবোক্রেসি, ভায়োল্যান্স চলছে। এটা কীসের আলামত আমি জানি না। আমি তো মনে করি যে, ওই রায়ের যে গুরুত্ব, সেটাকে কমিয়ে দেওয়ার জন্য একটা বিশেষ মহল ভিন্ন খাতে বিশ্বদৃষ্টিকে নেওয়ার জন্য এই কাজগুলো করে।'
এ ব্যাপারে লক্ষ রাখার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, 'কোনো একটি মহল অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে, অত্যন্ত ধূর্ততার সঙ্গে, চালাকির সঙ্গে সেটাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে কি না এটা আমাদের দেখা উচিত।'
বিএনপি সবাইকে নিয়ে রেইনবো স্টেট নির্মাণ করতে চায় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'আমরা সংস্কারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সুতরাং এখানে আমাদেরকে ভিন্নভাবে যদি কেউ চিত্রিত করতে চায়, আমরা কিছুতেই সেটাকে মেনে নেব না,' যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'আজকে আমরা একটা ট্রানজিশনাল পিরিয়ডে আছি। একটা দোলাচল চলছে। নির্বাচনের সময় ঘোষণা হয়েছে, এখনো শিডিউল হয়নি—হবে আশা করছি। নির্বাচনই কিন্তু সব শেষ নয়, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ডেমোক্রেসিতে ফিরে যাওয়া এবং ডেমোক্র্যাটিক কালচার গড়ে তোলা, যেটা আমাদের সবচেয়ে বড় অভাব। আমাদের দোষ নয়, এখানে দীর্ঘকাল ধরে, পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই এই অঞ্চলে-ভূখণ্ডে গণতন্ত্রের কোনো চর্চা হয়নি। গণতন্ত্রে আমরা বিভিন্ন রকম ব্যাখ্যা দেই।'
গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দিয়ে তিনি আরও বলেন, 'দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা এখানে অন্যের মতকে সহ্য করতে চাই না। আমরা তাকে উড়িয়ে দিতে চাই। এই জায়গা থেকে আমাদেরকে সরে আসতে হবে। সত্যিকার অর্থেই যদি আমরা সাসটেইনেবল হতে চাই, একটা ব্যবস্থা তৈরি করতে চাই, ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে না চাই, তাহলে গণতন্ত্রকে আমাদের এখানে নারিশ করতে হবে। তাকে প্রতিপালন করতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মাণ করতে হবে। কোন দল, কে জিতল, কে হারলো সেটা গুরুত্বপূর্ণ না, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানটা শক্তিশালী হলো কি না, আমার জুডিশিয়ারি ইন্ডিপেনডেন্ট কি না, আমার মিডিয়া ইন্ডিপেনডেন্ট কি না, আমাদের পার্লামেন্ট ইফেকটিভ কি না, আমাদের ব্যবস্থাটা আইনের শাসনে চলছে কি না, সুশাসন চলছে কি না, মানুষের সামাজিক মর্যাদা-মানবতা আমরা রাখতে পারছি কি না? এই বিষয়গুলোকে নিয়েই আমাদের ভবিষ্যতে কাজ করতে হবে।'
সব সময় বিএনপির ওপর দায়িত্ব বেশি বর্তায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'নির্বাচন আসছে, বিএনপির ওপর দায়িত্ব বেশি পরছে এবং বিএনপিকে সত্যিকার অর্থেই এমন একটা মোর্চা গড়ে তুলতে হবে, যে মোর্চা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে অতীতে, লড়াই করবে এবং গণতন্ত্রকে এখানে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে। এই মোর্চাই আমাদেরকে এখানে গড়তে হবে।'