‘কাউকে দোষ দিচ্ছি না’, ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবে মারা যাওয়া তরুণের বাবা
'কাউকে দোষ দিচ্ছি না, দালালরা আগেই বলেছিল সাগরে কিছু হলে দায় তাদের নয়। তবু আমার ছেলে গেছে, আমরাও পাঠিয়েছি।'—আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ইয়াকুব আলী শেখ। লিবিয়া থেকে সাগরপথে ইতালি যাওয়ার সময় নৌকাডুবে মারা গেছে তার ছেলে এনামুল শেখ (২৭)।এনামুলের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ননীক্ষীর ইউনিয়নের পশ্চিম লখন্দা গ্রামে। লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে তাদের নৌকা ডুবে যায়। এ ঘটনায় ওই ইউনিয়নের আরও ছয় তরুণ নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে তাদের পরিবার।ইয়াকুব আলী শেখ জানান, 'ভালো থাকার জন্য' দেড় মাস আ...
'কাউকে দোষ দিচ্ছি না, দালালরা আগেই বলেছিল সাগরে কিছু হলে দায় তাদের নয়। তবু আমার ছেলে গেছে, আমরাও পাঠিয়েছি।'—আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ইয়াকুব আলী শেখ। লিবিয়া থেকে সাগরপথে ইতালি যাওয়ার সময় নৌকাডুবে মারা গেছে তার ছেলে এনামুল শেখ (২৭)।
এনামুলের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ননীক্ষীর ইউনিয়নের পশ্চিম লখন্দা গ্রামে। লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে তাদের নৌকা ডুবে যায়। এ ঘটনায় ওই ইউনিয়নের আরও ছয় তরুণ নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে তাদের পরিবার।
ইয়াকুব আলী শেখ জানান, 'ভালো থাকার জন্য' দেড় মাস আগে এনামুল বাড়ি থেকে বের হন। প্রথমে ওমরাহ করতে সৌদি আরবে যান, এরপর কয়েকটি দেশ ঘুরে লিবিয়া পৌঁছান। সেখান থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে তার মৃত্যু হয়।
ছেলের সঙ্গে শেষ কথোপকথন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'গেল শুক্রবার ছেলের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছি। রোববার জানতে পারি সে মারা গেছে এবং লাশ লিবিয়ার হাসপাতালে আছে।'
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবরে ননীক্ষীর ইউনিয়নের আট তরুণ স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে জনপ্রতি ২১-২২ লাখ টাকা দিয়ে লিবিয়া যান। পরে তারা অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এই আটজনের মধ্যে সাতজনের বাড়ি পশ্চিম লখন্দা গ্রামে এবং একজনের বাড়ি পাশের গুনহার গ্রামে।
দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া এনামুলের চাচাতো ভাই আবুল শেখ ধলা (৩০) ভিডিও কলে পরিবারকে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, 'লিবিয়ার কোস্টগার্ড এনামুলের লাশ উদ্ধার করেছে। আমাদের নৌকার মাঝ বরাবর কোস্টগার্ডের নৌযান উঠে যায়। নৌকার মাঝখানে যারা ছিলেন তারা সেখানেই মারা যান। পেছনের দিকের অনেকে আহত হয়েছেন। যাদের লাইফ জ্যাকেট ছিল তারা ভেসে ছিল, যাদের ছিল না তারা সাগরে তলিয়ে যান। শেষ মুহূর্তে উদ্ধারকর্মীদের ফ্ল্যাশলাইটের আলো আমার মুখে পড়লে আমাকে উদ্ধার করা হয়।'
নৌকাডুবির এ ঘটনায় নিখোঁজ ছয় তরুণ হলেন—গুনহার গ্রামের নিয়াজ মিনা এবং পশ্চিম লখন্দা গ্রামের আনিস শেখ, ইব্রাহিম শেখ, হাবিবুল্লাহ মোল্লা সোহেল, আশিক মিনা ও দুলাল মিনা।
নিখোঁজ হাবিবুল্লাহ মোল্লার ভাই মোহাম্মদ ওহিদুল ইসলাম বলেন, '১৭ নভেম্বর রাতে জানতে পারি, আমার ভাই নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ হয়েছে। এ খবর শোনার পর থেকে আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। আমরা ভাইকে পাঠিয়েছিলাম ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য। এখন শুধু সরকারের কাছে আবেদন, ভাই বেঁচে থাকলে তাকে যেন দ্রুত খুঁজে পাওয়া যায়। আর মারা গেলে তার মরদেহ যেন আমরা দেশে ফিরে পাই।'
এ বিষয়ে মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, 'ননীক্ষীর ইউনিয়নের কয়েকজন যুবক ইতালি যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে—এমন তথ্য পাওয়ার পর স্থানীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে খোঁজ নিয়েছি। তবে ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ এখনো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।'