ভূমিকম্পে নরসিংদীর ভবন-সড়কে ফাটল, আতঙ্ক কাটেনি এখনো
গতকাল শুক্রবার আঘাত হানা ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর অধিকাংশ ভবন, সড়ক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফাটল দেখা দিয়েছে। একদিন পেরিয়ে গেলেও ওই এলাকার জনমনে আতঙ্ক এখনো কাটেনি।আজ শনিবার সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ভয়াবহতার এমন চিত্র। বিভিন্ন ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটসহ সড়কগুলোতেও শক্তিশালী এই ভূমিকম্প ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে।গতকালের ভূমিকম্পে নরসিংদীর ঘোড়াশালে বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা যায়। ওই স্থানের মাটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। শনিবার স...
গতকাল শুক্রবার আঘাত হানা ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর অধিকাংশ ভবন, সড়ক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফাটল দেখা দিয়েছে। একদিন পেরিয়ে গেলেও ওই এলাকার জনমনে আতঙ্ক এখনো কাটেনি।
আজ শনিবার সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ভয়াবহতার এমন চিত্র। বিভিন্ন ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটসহ সড়কগুলোতেও শক্তিশালী এই ভূমিকম্প ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে।
গতকালের ভূমিকম্পে নরসিংদীর ঘোড়াশালে বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা যায়। ওই স্থানের মাটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। শনিবার সকালে ঘোড়াশাল পৌর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ঘোড়াশাল ডেইরি ফার্ম ও পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে ধসে পড়া মাটির নমুনা সংগ্রহে কাজ করেন ভূতত্ত্ব বিভাগের ৭ সদস্যের একটি দল।
ভূমিকম্পে পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তায় ফাটল দেখা দিয়েছে। কলেজটির পাশের দোকানদার ফজলু মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভূমিকম্পের সময় হঠাৎ বিকট শব্দে মাটিসহ সব কাঁপতে থাকে। কিছুক্ষণ পরই কলেজের গেটের ভেতর মাটি সরে গিয়ে ফাটল দেখতে পাই। এমন ঘটনা আর কোনোদিন দেখিনি।'
কাছাকাছি লেবুপাড়া নামক স্থানে একটি গরুর খামারের মাঝামাঝি অঞ্চলে মাটি ফাঁকা হয়ে গেছে। ওই খামারটিতে শতাধিক গরু ছিল।
এছাড়া অনেক ভবনে দেখা দিয়েছে ফাটল। হেলে পড়েছে বহুতল ভবন। ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কিছু যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছে। আগুনও ধরেছিল। শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর পুরোনো রেলসেতুতেও ফাটল দেখা দিয়েছে।
এছাড়া পলাশের সরকারি খাদ্য গুদাম, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ শতাধিক স্থাপনায় ব্যাপক ফাটল দেখা দিয়েছে।
আতঙ্কে ছিলেন নদীর তীরে বসবাসরত মানুষরা। পলাশ উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা রফিক আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভূমিকম্পের সময় নদীর পানি অনেক ওপরে উঠে প্রচণ্ড ঢেউ তুলেছিল। আমরা অনেক ভয় পেয়েছিলাম। অনেকক্ষণ পর বুঝতে পেরেছি, ভূমিকম্প হয়েছে। তবে জীবনে এমন কম্পন আগে আর কখনো দেখিনি।'
আতঙ্কিত হয়ে পড়েন প্রাণ-আরএফএল কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরাও। কম্পনের সময় হুড়োহুড়িতে বেশ কয়েকজন আহতও হন। প্রাণ আরএফএলের শ্রমিক আবদুল সাত্তার বলেন, 'আমরা প্রথমে বুঝতে পারিনি। মনে করেছিলাম, বাইরে কোনো ভারী লরি যাচ্ছে। পরে দেখি কারখানার সব ভবন কাঁপছে। এরপর সবাই দৌড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করি। এ সময় কয়েকজন আহত হয়। ভয়ে কয়েকজন জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।'
দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল নরসিংদীর মাধবদীতে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসজিএস বলছে, কেন্দ্রস্থল নরসিংদী সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিমে।
গুগল ম্যাপ অনুযায়ী, কেন্দ্রস্থল পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা গ্রাম। স্থানটি শীতলক্ষ্যা নদীর পারে। এটি পলাশ উপজেলার অধীন ঘোড়াশাল পৌরশহরের কাছাকাছি। মাধবদীও পলাশ উপজেলার পাশে। তাই এই অঞ্চলের মানুষগুলোই ভূমিকম্পে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পাশাপাশি ভূমিকম্পের প্রভাবও অনুভব করেছেন বেশি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আ.স.ম ওবায়দুল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রাথমিক ভাবে আমরা ফাটল ধরা মাটির নমুনা সংগ্রহ করছে। এসব নমুনা সংগ্রহের পর তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পারবো- ভূমিকম্পটি কী ধরনের ও কতটুকু গুরুতর ছিল।
নরসিংদী জেলাব্যাপী ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে কাজ করছে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন ইউনিট। আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান।
তবে পলাশ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কাউছার আলম সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এরই মধ্যে পলাশ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে কাজ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত শতাধিক মাটির ঘর ও অর্ধশতাধিক সরকারি-বেসরকারি ভবনে ফাটল ও ক্ষতি হওয়ার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।'
তবে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলেও জানান তিনি। এছাড়া, ভূমিকম্পের সময় পলাশ উপজেলায় মারা যাওয়া দুই জনের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান দেওয়াসহ কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সহযোগিতা করা হয়েছে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান তিনি।