চাপ বাড়লেই ফেটে যায় পাইপ, ভোগান্তিতে ৪০ হাজার গ্রাহক
রাতে যখন সবাই ঘুমোতে যান, চট্টগ্রামের আকবর শাহ এলাকার মরিয়ম ভবনের কেয়ারটেকার মো. আলমগীর হোসেনকে তখন ওয়াসার পানি তোলার মোটরের পাশে বসে অপেক্ষায় থাকতে হয়। কারণ, সপ্তাহে তিনদিন গভীর রাতে পানি সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এজন্য যখন লাইনে পানি আসা শুরু হয়, তাড়াহুড়ো করে তিনি ছুটে যান ভবনের ১০ হাজার লিটার ধারণক্ষমতার পানির ট্যাংক পূর্ণ করতে। কেননা, চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পরই বন্ধ হয়ে যায় পানি আসা।আলমগীর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শনি, রবি আর সোমবার— সপ্তাহে এই তিন দিনই পানি আসে। সেটিও গভীর রাতে। তাই আমরা ঘুম...
রাতে যখন সবাই ঘুমোতে যান, চট্টগ্রামের আকবর শাহ এলাকার মরিয়ম ভবনের কেয়ারটেকার মো. আলমগীর হোসেনকে তখন ওয়াসার পানি তোলার মোটরের পাশে বসে অপেক্ষায় থাকতে হয়। কারণ, সপ্তাহে তিনদিন গভীর রাতে পানি সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এজন্য যখন লাইনে পানি আসা শুরু হয়, তাড়াহুড়ো করে তিনি ছুটে যান ভবনের ১০ হাজার লিটার ধারণক্ষমতার পানির ট্যাংক পূর্ণ করতে। কেননা, চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পরই বন্ধ হয়ে যায় পানি আসা।
আলমগীর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শনি, রবি আর সোমবার— সপ্তাহে এই তিন দিনই পানি আসে। সেটিও গভীর রাতে। তাই আমরা ঘুম বাদ দিয়ে পানির জন্য অপেক্ষা করি।' পাঁচতলা এ ভবনের ১০টি পরিবারের পানি ব্যবস্থাপনা তিনিই সামলান।
প্রতিটি পরিবারের দৈনিক কমপক্ষে ৫০০ লিটার পানি লাগে। পুরোনো পাইপলাইন দিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার এই অনিয়মিত সরবরাহের ফলে বাসিন্দারা শুধু ভোগান্তি পোহাচ্ছেন না, পাশাপাশি সরবরাহ বন্ধের দিনগুলোতে পানির চাহিদা মেটাতে তাদের অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে।
দ্য ডেইলি স্টারের হাতে আসা নথি বলছে, ঘাটতির কারণ সুস্পষ্ট— অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ বছর আগে বসানো ইউপিভিসি ও সিমেন্টের পাইপলাইনগুলো পানি প্রবাহের নিয়মিত চাপ আর সহ্য করতে পারছে না। তাই সরবরাহ ব্যবস্থা এমন ভঙ্গুরভাবেই চলছে।
মহানগরের সামগ্রিক পানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে চট্টগ্রাম ওয়াসা ছয়টি সেক্টরে ভাগ করেছে। এর মধ্যে পাঁচটি সেক্টরের পানি সরবরাহ নির্ভর করছে ৩৭৫ কিলোমিটারের পুরোনো পাইপলাইনের ওপর।
এ পাঁচটি সেক্টর হলো— বারিক বিল্ডিং থেকে পতেঙ্গা, খুলশি থেকে একে খান, আমিন জুট মিল থেকে অক্সিজেন, বহদ্দারহাট থেকে মোহরা ও খাজা রোড থেকে চাক্তাই।
এই পাঁচ সেক্টরে প্রায় ৪০ হাজার গ্রাহককে পানি সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। যা চলতি বছরের জুন পর্যন্ত চট্টগ্রাম ওয়াসার মোট ৯০ হাজার ৮৪৬ গ্রাহকের প্রায় অর্ধেক।
সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি বারিক বিল্ডিং–পতেঙ্গা সেক্টরে। এখানকার প্রায় ১৫ হাজার গ্রাহক রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
শুধু একটি সেক্টরের প্রায় ৭৫০ কিলোমিটার পানির লাইনে সম্প্রতি ডাকটাইল আয়রন পাইপ বসানো হয়েছে।
চাহিদা মেটাতে অনেকেই বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দামে পানি কিনছেন। পতেঙ্গার চা–দোকানি বেলাল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যবসা চালাতে প্রায়ই বাইরের থেকে থেকে পানির জার কিনতে হয়। প্রতি জারের দাম ৪০-৫০ টাকা করে পড়ে। এছাড়া কোনো উপায় নেই।'
ওয়াসার সংযোগ থাকা সত্ত্বেও কিছু বাসায় কখনোই পানি আসে না। পতেঙ্গার মকবুল আলী সোসাইটি এলাকার রোকেয়া বেগম তাদের একজন। ২০১৯ সাল থেকে ওয়াসার মাসিক পানির বিল দিয়ে আসছেন। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'এখন পর্যন্ত এক ফোঁটা পানিও পাইনি। শুধু সংযোগ টিকিয়ে রাখার জন্যই বিল দিই।'
চট্টগ্রাম ওয়াসা তাদের মৌলিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি নাজির হোসেন। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'ছয় দশক ধরে তারা কাজ করছে। তারপরও নিজের গ্রাহকদের জন্য পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারেনি।'
চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল আহসান চৌধুরী স্বীকার করেন, পাইপলাইনগুলো জীর্ণ এবং লিকপ্রবণ। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'চাপ বাড়ালেই লাইন ফেটে যায়। এগুলো না বদলালে পানি সরবরাহ করা সম্ভব না।'
নগরীর দৈনিক ৬০ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে প্রায় ৪৯.৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার। এর মধ্যে ৩ দশমিক ৩ কোটি লিটার পানি তোলা হয় গভীর নলকূপ থেকে। আর বাকি অংশ আসে কর্ণফুলী ও হালদা নদী থেকে পানি এনে চারটি সারফেস–ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে পরিশোধনের পর।
২০২৯ সালের মধ্যে সব পুরোনো লাইন বদলে ফেলার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম। 'নতুন পাইপলাইন বসলে সমস্যার সমাধান হবে বলে আমরা আশা করছি,' বলেন তিনি।