নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার মধ্য নরসিংহপুর গ্রামে স্থানীয় একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর আপত্তির মুখে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে লালন সাধুসঙ্গের আয়োজন।

আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে কাশীপুর ইউপির এ গ্রামটিতে অবস্থিত মুক্তিধাম আশ্রমে দুই দিনব্যাপী সাধুসঙ্গের উদ্বোধন করেন নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা রফিউর রাব্বি।

গত বছর 'তৌহিদি জনতার' ব্যানারে একই ধর্মীয় গোষ্ঠীর হুমকি ও বাধার মুখে এ আয়োজন বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন। পরে সারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লালন ভক্তরা ফিরে যান।

মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ফকির শাহজালাল বলেন, গত বছর বাধা পেয়ে এবার আগেভাগেই আমি জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার বরাবর চিঠি দিয়ে অবহিত করি। পরে গত ২০ নভেম্বর উচ্চস্বরে মাইক না বাজানো, নারী-পুরুষ আলাদা বসানো, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনে—এমন বক্তব্য পরিহার করে মিলাদ-জিকিরের মাধ্যমে আয়োজন শেষ করাসহ ১৩ শর্তে অনুমতি দেওয়া যেতে পারে জানিয়ে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেন জেলা পুলিশ সুপার।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর 'তৌহিদি জনতা' নাম দিয়ে স্থানীয় শতাধিক মুসল্লি বিক্ষোভ করেন। তারা আমাদের আয়োজন গতবারের মতো বন্ধ রাখার দাবি জানান। পরে পুলিশ-প্রশাসন এসে তাদের শান্ত করে। পরে পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আয়োজন সংক্ষিপ্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার জুমার নামাজের পর গ্রামটির একটি স্কুল মাঠে জড়ো হন শতাধিক মুসল্লি। এতে হেফাজতে ইসলাম, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। তাদের নেতৃত্ব দেন হেফাজতে ইসলামের জেলা কমিটির সহসভাপতি ও ইমাম ঐক্য পরিষদ কাশীপুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মুফতি আব্দুল হান্নান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল হান্নান মোবাইল ফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লালন সাধুসঙ্গের আড়ালে তারা অসামাজিক কার্যকলাপ চালায়। এই ধরনের গান-বাজনার আয়োজন ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকেও ঠিক না, তা ছাড়া এলাকাবাসীও চান না। এ লালন সাধুসঙ্গ বন্ধ করতে আমরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গেও বসেছিলাম, তারা এ আয়োজন বন্ধের আশ্বাস দিয়েছিল, কিন্তু এখন শুনছি কিছুই বন্ধ হয়নি।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রশাসনে যারা আছেন, তারা কোন যুক্তিতে এটা করতে দিচ্ছে জানি না। কিন্তু এটা আমরা অবশ্যই বন্ধ করব। এটা নিয়ে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দায়ী থাকবে প্রশাসন।'

আজ দুপুর থেকে সাধুসঙ্গের এ আয়োজনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লালন ভক্তরা আসতে শুরু করেন। বিকেল ৪টায় আয়োজন শুরু করার কথা থাকলেও জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে আয়োজনে বাধা দেওয়া হয়। পরে গানের শব্দ বাইরে না যাওয়ার শর্তে মৌখিক অনুমতি দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাছলিমা শিরিন মোবাইল ফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লালন সাধুসঙ্গের এ আয়োজনে প্রশাসনের কোনো অনুমতি নেই। তারপরও যেহেতু তারা আয়োজন করে ফেলেছেন সেজন্য স্বল্প পরিসরে করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উচ্চস্বরে কোনো গান-বাজনা বা মেলা হবে না।'

আয়োজনের উদ্বোধক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, 'এ বছর আয়োজনটি ছিল আরও বড় পরিসরে এবং ব্যাপকভাবে। গত বছর এ আয়োজনটি ঘোষণা করেও তৌহিদি জনতার বাধার কারণে করা হয়নি। এবারও যখন তারা আয়োজনটি করতে যাচ্ছে তখন ওই গোষ্ঠীটিই অনৈসলামিক, ইসলামবিরোধী কার্যকলাপের কথা বলে এর বিরুদ্ধে নেমেছে। ফলে আয়োজনটি যে পরিসরে ছিলো, সেটি ছোট করতে করতে যে অবস্থায় এসেছে, সেটি না করার মতোই।'