ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) থাকা উচিত কি না—তা নিয়ে সরকারের মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছে। একপক্ষ মনে করে, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য এটি রাখা দরকার। আরেক পক্ষের মতে, বিদ্যমান কাঠামোতে এটা থাকা উচিত নয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্টদের যুক্তি হলো, 'রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে' এমন ব্যবস্থা রাখা উচিত।

সরকার চাইলে এনটিএমসির প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের যে কোনো ব্যক্তির মোবাইল ফোনে আড়ি পাততে পারে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়ার বিষয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়ব উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসারসহ বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেন।

বৈঠকে এনটিএমসি সংক্রান্ত আলোচনার বিষয়ে কমপক্ষে তিনটি সূত্র থেকে দ্য ডেইলি স্টার জানতে পেরেছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রস্তাবিত 'বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫' এর খসড়ায় এনটিএমসির মতো প্রতিষ্ঠান না রাখার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

এই বিভাগে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এনটিএমসির মতো প্রতিষ্ঠান কেন থাকা উচিত নয়, সে বিষয়ে বৈঠকে যুক্তি তুলে ধরেন।

সূত্র জানিয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের আইন বহির্ভূত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের উদাহরণ তিনি তুলে ধরেন। বলেন, যদি সন্ত্রাসী ঘটনা বা অন্য কোনো রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে কারও ফোনে আড়ি পাতার প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে আদালতের অনুমোদন নেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হবে।

তবে বৈঠকে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা যে কোনো ফরম্যাটে, প্রয়োজনে নাম পরিবর্তন করে হলেও এনটিএমসি রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুসারে, উদাহরণ টেনে একটি সংস্থার প্রধান বলেন, বড় কোনো ঘটনায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কারণে রাত ২টার দিকে কারও ফোনে আড়ি পাতার প্রয়োজন হলে তখন আদালত পাব কোথায়? আদালতে আবেদন করে অনুমোদন পেতে পেতে যদি প্রয়োজনীয় কাজই না হয়, নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা তাহলে কীভাবে কাজ করবে?

আরেকটি সংস্থার প্রধান যুক্তি তুলে ধরে বলেন, মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন চোরাচালান ধরতে গেলে অনেক সময় তাৎক্ষণিক তথ্যের প্রয়োজন হয়, এনটিএমসির মতো প্রতিষ্ঠান না থাকলে এই ধরনের কাজ বাধাগ্রস্ত হবে।

বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার ১৫ জনের বেশি কর্মকর্তা বৈঠকে অংশ নেন, যাদের প্রায় সবাই এনটিএমসির পক্ষে তাদের মত দেন, জানিয়েছে সূত্র।

এনটিএমসি রাখার বিষয়ে বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ইতিবাচক অবস্থান নিলেও আরও কিছু বিষয় পর্যালোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিরোধী মত দমনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার এনটিএমসির যথেচ্ছ ব্যবহার করেছিল, যে কারণে অনেকের উদ্বেগ আছে। এ বিষয়ে আবারও একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। এরপর অধ্যাদেশের খসড়াটি উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।