যুবদল নেতা কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডে ‘আন্ডারওয়ার্ল্ডের যোগসূত্র’
রাজধানীর পল্লবীতে একটি দোকানে ঢুকে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে গুলি করে হত্যার নেপথ্যে আন্ডারওয়ার্ল্ড সংশ্লিষ্ট একটি চক্রের সঙ্গে বিরোধ কারণ হিসেবে মনে করছে পুলিশ।গত সোমবার সন্ধ্যায় কিবরিয়া হত্যার শিকার হন। ইতোমধ্যে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত কয়েকজনের নাম জানতে পেরেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।তারা আরও জানিয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিংবা স্থানীয় মাদক চোরাকারবারিদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব কারণ কি না—সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।তবে এলাকাবাসীর ভাষ্য, পল্লবীর চিহ্নিত সন্ত্রাসী...
রাজধানীর পল্লবীতে একটি দোকানে ঢুকে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে গুলি করে হত্যার নেপথ্যে আন্ডারওয়ার্ল্ড সংশ্লিষ্ট একটি চক্রের সঙ্গে বিরোধ কারণ হিসেবে মনে করছে পুলিশ।
গত সোমবার সন্ধ্যায় কিবরিয়া হত্যার শিকার হন। ইতোমধ্যে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত কয়েকজনের নাম জানতে পেরেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
তারা আরও জানিয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিংবা স্থানীয় মাদক চোরাকারবারিদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব কারণ কি না—সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তবে এলাকাবাসীর ভাষ্য, পল্লবীর চিহ্নিত সন্ত্রাসী মামুনের সহযোগীরাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। মামুন দীর্ঘ দিন ধরে মাদক চোরাকারবারি, চাঁদাবাজি ও জমি দখলের মতো অপরাধে জড়িত।
তারা আরও জানান, কিবরিয়া এক সময় মামুনের ঘনিষ্ট ছিলেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর কিবরিয়া 'প্রভাবশালী' হয়ে ওঠেন এবং মামুনের সঙ্গে তার সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়।
সূত্র জানিয়েছে, 'ঢ ব্লক মামুন' নামে পরিচিত এই সন্ত্রাসী দীর্ঘ দিন ধরে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে জড়িত। তার বড় ভাই জামিলও একই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। কয়েক বছর আগে সাত কোটি টাকা চাঁদা নিয়ে বিরোধের জেরে দেশ ছাড়েন জামিল।
এলাকাবাসী জানান, বর্তমানে মামুন ও তার ছোট ভাই মাশিউর পল্লবী এলাকার অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করছেন।
আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সদস্য ইব্রাহিম ও শাহাদাত গ্রুপের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র।
যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিবরিয়ার এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তিন ভাই—জামিল, মামুন ও মশিউর বছরের পর বছর ধরে পল্লবীতে জমি দখল, মাদক চোরাকারবারি ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন।
'শোনা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিজিএমইএর এক জ্যেষ্ঠ নেতা নাকি তাদের পিঠ বাঁচাতেন। তিনজনই দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে। মামুনের বিরুদ্ধে বহু মামলা রয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, '৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আন্ডারওয়ার্ল্ডের ইব্রাহিম ও শাহাদাত গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করে তারা আধিপত্য বাড়ানোর চেষ্টা করে, বিশেষ করে মাদক চোরাকারবারিতে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল। সম্প্রতি ঢাকা উত্তর বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতার নির্দেশে কিবরিয়া এলাকায় মাদকের বিস্তার ঠেকানোর উদ্যোগ নেন। মামুন বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি।'
কিবরিয়া নিজেও উদ্বিগ্ন ছিলেন দাবি করে তিনি বলেন, 'গত শনিবার কিবরিয়া ভাই আমাকে ফোন করে তার উদ্বেগ জানিয়েছিলেন।'
দুইজনকেই চেনেন এমন এক যুবদল নেতা জানান, কিবরিয়া পল্লবী থেকে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। 'যে কারণে তিনি মাদক চোরাকারবারি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এতে তার জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করেছিল। বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে মামুন, তার ভাতিজা মাসুম ও সহযোগীরা হত্যাকাণ্ড ঘটায়।'
কিবরিয়ার স্ত্রী সাবিহা আখতার দিনা গতকাল বিকেলে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা সাত-আটজনের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ওই পাঁচজন হলেন—মো. জনি ভূঁইয়া (২৫), সোহেল ওরফে পাতা সোহেল ওরফে মনির হোসেন (৩০), সোহাগ ওরফে কাল্লু (২৭), মাসুম ওরফে ভাইগ্না মাসুদ (২৮) ও রোকন (৩০)।
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুর রহমান বলেন, হত্যাকাণ্ডের সময় জনি ঘটনাস্থলে ছিল, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 'আরও কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।'
এজাহার অনুযায়ী, সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে কিবরিয়া বিক্রমপুর হার্ডওয়্যার অ্যান্ড স্যানিটারি দোকানে বসে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। পাশেই অবস্থান নিয়েছিল সোহেল ও মাসুম। তাদের নির্দেশে সন্ধ্যা ৬টা ৪২ মিনিটের দিকে জনি, সোহাগ ও রোকন কিবরিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে দোকানে ঢোকে।
কিবরিয়ার শরীরের বিভিন্ন অংশে তারা একাধিক গুলি চালায়। তার চোয়াল, বুকের দুই পাশে, ঘাড়ের ডান দিকে ও পেছনে, দুই হাতে এবং বাঁ কানের পেছনে গুলি লাগে।
ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ২০০-২৫০ ফুট দূরে পল্লবী ঢ ব্লকের এক নম্বর লেনে বাবা-মায়ের বাসায় গতকাল বিকেলে কিবরিয়ার মরদেহ নেওয়া হয়েছিল। দুপুর ২টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আত্মীয়-স্বজন, বিএনপি ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছেন।
ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে কিবরিয়ার ছোট ভাই গোলাম কবির বলেন, '...হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য এখনো পরিষ্কার নয়...আমার ভাইয়ের রাজনৈতিক অবস্থান দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছিল, এটিও একটি কারণ হতে পারে।'
যে দোকানে হত্যাকাণ্ড হয়, কিবরিয়া নিজেও বি ব্লকের পাঁচ নম্বর রোডের ওই দোকানের মালিক ছিলেন। তার ব্যবসায়িক অংশীদার মাসুদ রানা। তিনি গতকাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কিবরিয়া দুপুর থেকে দোকানেই ছিলেন, আমি তার জন্য খাবারও নিয়ে গিয়েছিলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর অজ্ঞাত হামলাকারীরা দোকানে ঢুকে তাকে গুলি করে।'
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, এলাকাভিত্তিক আধিপত্য বিস্তার ও ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে সাম্প্রতিক কয়েকটি হত্যা ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। যার পেছনে আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তিরা জড়িত।